যদিও আমাদের সমাজে বেশিরভাগ সময় আমরা পুরুষদেরই উদ্যোক্তা হতে দেখি, নারীরা বহু দশক ধরে বিভিন্ন শিল্পে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এসটে লাউডার প্রথম সফল বৈশ্বিক নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত, যিনি ১৯৪০-এর দশকে তার প্রসাধনী সংস্থা চালু করেছিলেন।তার দেখানো পথে হেঁটে বিগত কয়েক দশকে ব্যবসায় স্ব-প্রতিষ্ঠিত নারীদের একটি দুর্দান্ত উত্থান ঘটেছে।
নারী উদ্যোক্তারা ঐতিহাসিকভাবে ফ্যাশন হাউস বা কসমেটিক কোম্পানি চালানোর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, কিন্তু সাম্প্রতিককালে, অনেকে রিয়েল এস্টেট এবং বায়োফার্মার মতো অন্যান্য শিল্পে তাদের স্বাক্ষর রাখছেন।
আজ নারী উদ্যোক্তাদের তালিকা অনেক ইন্ডাস্ট্রিতে বিস্তৃত। আমরা আজ ১০ জন সফল মহিলা উদ্যোক্তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছি, যারা কিনা সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিভিন্ন শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এই তালিকাটি কোনও নির্দিষ্ট ক্রম মেনে তৈরি করা হয়নি। এবং কোনওভাবেই এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়, কারণ এই দশজনের বাইরে প্রচুর সফল নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এমন নারীদের আমরা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছি, যারা তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার মাধ্যমে বেশ কিছু বিশ্ব-বিখ্যাত ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন৷
ঝাং জিন
![zhang xin](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/zhang-xin-1024x674.webp)
ঝাং জিন হলেন SOHO চায়না এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, চীনের একটি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট ফার্ম যা ২০০৭ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে।
ঝাং “যে মহিলা বেইজিং তৈরি করেছিলেন” হিসাবে পরিচিত। শুরুতে তিনি কারখানার কর্মী ছিলেন, পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঝাং তার কোম্পানি চালু করার আগে গোল্ডম্যান স্যাকশের জন্য কাজ করেছিলেন। রিয়েল এস্টেট থেকে তিনি এখন পর্যন্ত ২.৮ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
কিরণ মজুমদার-শ
![kiran majumdar shaw](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/kiran-majumdar.jpeg)
কিরণ মজুমদার-শ একটি বিশ্বব্যাপী বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োকন-এর প্রতিষ্ঠাতা। কিরণ একটি ভাড়া করা ছাউনি থেকে বায়োকন শুরু করেন, এবং বর্তমানে রাজস্বের দিক থেকে এটিকে ভারতের বৃহত্তম তালিকাভুক্ত বায়োফার্মা ফার্মে পরিণত করেছেন। বায়োকন ২০০৪ তাদের শেয়ার পবলিক করে, এবং শুধুমাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় কোম্পানি হয়ে ওঠে যা শেয়ার মার্কেটে তার প্রথম দিনেই ১ বিলিয়ন ডলারে পৌছয়। মজুমদার-শ হল ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী নারী (নাইকা প্রতিষ্ঠাতা ফাল্গুনী নায়ারের পিছনে)। 2023 সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তার সম্পদের পরিমাণ ২.১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
জেনিস ব্রায়ান্ট হাওয়ার্ড
![janice bryant hayward](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/janice-bryant-howard.jpeg)
জেনিস ব্রায়ান্ট হাওয়ার্ড হলেন ActOne গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। ActOne হচ্ছে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা-নেতৃত্বাধীন কোম্পানি, যা ১ বিলিয়ন বার্ষিক রেভিন্যু আয় করে৷
ActOne একটি হিউম্যান রিসোর্স পরামর্শক সংস্থা, এবং ৩৩টি দেশে ১৭০০০ এরও বেশি ক্লায়েন্ট সহ লস অ্যাঞ্জেলেসে এর সদরদপ্তর অবস্থিত।
এই তালিকায় তার অনেকের মতোই, জেনিসও খুব ছোট থেকে শুরু করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে মাত্র ১৫০০ ডলার দিয়ে তিনি তার কোম্পানি চালু করেন।
তিনি ২০২২ সালে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ‘সেলফ-মেড’ নারী হিসেবে অভিহিত হয়েছেন।
অপরাহ উইনফ্রে
![oprah winfrey](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/oprah-winfrey.webp)
মিডিয়া মোগল অপরাহ উইনফ্রে তার মিডিয়া সাম্রাজ্য তৈরি করেই চলেছেন। উইনফ্রে একজন টিভি ব্যক্তিত্ব থেকে হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। তিনি অক্সিজেন মিডিয়া নামক একটি কেবল স্টেশন সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত তার টক শো হোস্টিং চালিয়ে যান, পরবর্তীতে OWN: Oprah Winfrey Network তৈরি করেন, যার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দেন। ২০১৫ সালে, উইনফ্রে ওয়েট ওয়াচার্স ইন্টারন্যাশনালের একটি ইক্যুইটি শেয়ার কিনেছিলেন এবং জনপ্রিয় সাবস্ক্রিপশন ওজন কমানোর প্রোগ্রামের একজন মুখপাত্র হয়েছিলেন। ফোর্বস অনুসারে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তার সম্পদের পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন ডলার।
বিয়োন্সে
![beyonce](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/beyonce.webp)
এই তালিকার অন্য কাউকে না চিনলে, বিয়োন্সেকে আপনারা অবশ্যই চিনবেন। গায়ক-গীতিকার বিয়োন্সে, ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি ডেসটিনি’স চাইল্ডে অংশ নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে শুরু করে তিনি এখন সর্বাধিক বিক্রিত মহিলা একক শিল্পী, এবং একটি বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন। বিয়োন্সে ২০১২ সালে PepsiCo-এর সাথে ৫০ মিলিয়ন ডলারের এনডোর্সমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুনঃ যেভাবে সফল উদ্যোক্তা হবেন
তার কোম্পানি পার্কউড এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং তৈরি পোশাক ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত অবস্থান গড়েছেন। ২০১৯ সালে, তিনি স্ট্রিমিং পরিষেবা সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য নেটফ্লিক্সের সাথে ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করয়েছেন।ফোর্বস অনুসারে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার মোট সম্পদ ৪৫০ মিলিয়ন ডলার।
আরিয়ানা হাফিংটন
![ariana huffington](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/ariana-huffington-1.webp)
আরিয়ানা হাফিংটন ২০০৫ সালে দ্য হাফিংটন পোস্ট নিউজ ওয়েবসাইট চালু করেন। তিনি ২০১১ সালে AOL-এর কাছে হাফিংটন পোস্ট বিক্রি করেন, কিন্তু এটিকে গাইড করতে এবং বিদেশে হাফিংটন ব্র্যান্ডের বিকাশ অব্যাহত রাখতে বিক্রির পরও যুক্ত থেকে যান।
একই বছর, টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৬ সালে, তিনি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার স্টার্টআপ থ্রাইভ গ্লোবাল চালু করতে হাফিংটন পোস্ট থেকে পদত্যাগ করেন।এছাড়া তিনি ১৫টি বেস্ট সেলার বইও লিখেছেন।
টোরি বার্চ
![tory burch](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/tory-burch.webp)
তার নিজের নামের কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা টোরি বার্চ ২০০৪ সালে ইউএস-ভিত্তিক পোশাক এবং ফ্যাশন লাইন চালু করেন। ব্র্যান্ডটি এখন বছরে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করে। ২০২০ সালে ফোর্বসের 50 ওভার 50, (লাইফস্টাইল) এবং আমেরিকার স্ব-নির্মিত মহিলাদের তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। বার্চ একজন জনহিতৈষী, যিনি নারী উদ্যোক্তাদের সমর্থন করার জন্য টরি বার্চ ফাউন্ডেশনও চালু করেছেন।
সারা ব্লেকলি
![sarah blakely](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/sarah-blakely-1024x576.jpeg)
ব্লেকলি তার নিজের অর্থ, আইডিয়া, এবং বিশুদ্ধ প্রতিভা দিয়ে মাত্র ৫০০০ ডলার দিয়ে শুরু করেছিলেনমহিলা এবং পুরুষদের জন্য স্প্যানক্স অন্তর্বাস কোম্পানি। আজ, ব্র্যান্ডটি ৫০ টিরও বেশি দেশে বিস্তৃত হয়েছে। টোরি বার্চের মতো, ব্লেকলিরও বিশ্বব্যাপী মহিলাদের সাহায্য করার জন্য একটি সংগঠন রয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি ২০২০ সালে গ্লোবালগিভিং এর সহায়তায় রেড ব্যাকপ্যাক ফান্ড চালু করেন। এখন পর্যন্ত হাজারেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা এই ফান্ড থেকে উপকৃত হয়েছে।
কেটি রোডান এবং ক্যাথি ফিল্ডস
![katie and kathy](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/katie-and-kathy-1.webp)
স্কিনকেয়ার এবং মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি Rodan + Fields-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন এই দুজন। সব বয়সের মানুষের ত্বকের ব্রণ নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে তারা ১৯৯৫ সালে তাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট ‘প্রোঅ্যাক্টিভ’ ডেভেলপ করার জন্য একসঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই তারা চর্মরোগ সংক্রান্ত জ্ঞান আহরণ করেছেন, যা তাদের ব্রণকে জয় করার ফর্মুলা বের করতে সাহায্য করেছে।
তাদের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ ৫৩০ মিলিয়ন ডলার এবং ফোর্বসের ২০২২ সালের আমেরিকার সবচেয়ে ধনী স্ব-নির্মিত মহিলাদের তালিকায় তাদের দুজনকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রিহানা
![rihanna](https://bizvaly.com/wp-content/uploads/2023/06/rihanna-1024x681.jpeg)
রিহানা এই তালিকায় সবচেয়ে কম বয়সী মহিলা উদ্যোক্তা। সুপারস্টার গায়িকা তার ১.৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের বেশিরভাগই ফেন্টি বিউটি থেকে তৈরি করেছেন।ফেন্টি বিউটি একটি প্রসাধনী লাইন। রিহানা বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় তৈরি করেছেন স্যাভেজ এক্স ফেন্টি, একটি বিলাসবহুল অন্তর্বাস ব্র্যান্ড। তার ফাউন্ডেশন, ক্লারা লিওনেল, ২০২০ সালে জলবায়ু পরিবর্তন, বর্ণবাদ, কোভিড এবং অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলার জন্য ৪৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তার মোট সম্পদ ১.৪ বিলিয়ন ডলার।
এই সফল নারী উদ্যোক্তারা শুধু নিজেদের ব্যবসাকেই বড় করেননি, বরঞ্চ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া, উঠতি নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা সবাই আগামী দিনের নারী উদ্যোক্তাদের রোলমডেল।